কোন ছিনতাইকারী নন, যে কারণে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলেন সেই ব্যক্তিকে

৩৫ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর অনুসন্ধানে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য। বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার নসরতপুর রেলস্টেশনের কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে এক ব্যক্তিকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।

মাত্র ৩৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলছেন, আর ভেতর থেকে কেউ তার হাত ধরে রেখেছে। একপর্যায়ে হাত ছেড়ে দিলে তিনি ট্রেনের নিচে পড়ে যান।

ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান, যিনি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের বাসিন্দা। ভিডিওতে তাকে ছিনতাইকারী ও চোর হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও মতিউরের পরিবার বলছে, পুরো ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত হামলার ফল।

মতিউর এক সময় অটোরিকশাচালক ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিদেশে লোক পাঠানোর কাজে যুক্ত। তার ছেলে আহসান হাবিব জানান, কিছুদিন আগে বগুড়ার তালশন গ্রামের সজীব হোসেন নামের এক যুবককে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠান মতিউর। কিন্তু কাগজপত্রে কিছু বিলম্ব হওয়ায় সজীবের পরিবার ক্ষুব্ধ হয় এবং এক সপ্তাহ আগে মতিউরের বাড়িতে গিয়েও হুমকি-ধমকি দিয়ে আসে।

পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন বগুড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনেই মতিউরকে একা পেয়ে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং শ্যালকরা তাকে ‘চোর’ অপবাদে মারধর করে এবং চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। ফেলে দেওয়ার আগে তারা প্রায় ৪-৫ মিনিট ধরে তাকে ঝুলিয়ে রাখে। পরে ট্রেনটি নসরতপুর স্টেশনে পৌঁছালে প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনি নিচে পড়ে যান।

মতিউরের ছেলে জানান, ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার পর স্থানীয় কিছু লোক না বুঝেই তাকে ছিনতাইকারী ভেবে বেধড়ক মারধর করে। পরে তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

তবে অভিযোগ জানাতে গিয়ে হতাশ হতে হয় পরিবারকে। আহসান হাবিব বলেন, আদমদিঘী থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং সান্তাহার রেলওয়ে থানায় যেতে বলে। কিন্তু রেলওয়ে থানায় অভিযোগ করতে গেলে বলা হয়, “আপনার বাবা তো মারা যাননি, মামলা নেওয়া যাবে না।”

এ নিয়ে হতাশ হাবিব বলেন, “আমার বাবা কোনো অপরাধী নন। বৈধভাবে ব্যবসা করছেন। আমরা বিচার চাই।”

সান্তাহারের স্থানীয় বাসিন্দা নেহাল আহমেদ বলেন, “আমি মতিউরকে অনেক দিন ধরে চিনি। তিনি আমার দুই আত্মীয়কে বিদেশে পাঠিয়েছেন, তারা সেখানে ভালই আছেন। তাদের কারও কোনো সমস্যা হয়নি। এমন লাঞ্ছনার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।”

এদিকে, সজীবের বাবা মোহাম্মদ হেলাল বলেন, “আমার ছেলে এখনো সৌদি আরবে কাজ পাচ্ছে না। এ নিয়ে মতিউরের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও সে এড়িয়ে যায়।” ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় তিনি দায় স্বীকার না করলেও জানান, “সজীবের শ্যালকরা হয়তো ফেলে দিয়েছে, তবে রাকিব কিছু করেনি। আসলে ট্রেনে ঠিক কী হয়েছে, বলতে পারছি না।”

আদমদিঘী থানার ওসি এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এটি রেলওয়ের আওতাধীন ঘটনা, তাই আমরা অভিযোগ নেইনি।”

অন্যদিকে সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “তারা একবার এসেছিলেন, পরে আবার আদমদিঘী থানা থেকে ফোন পেয়ে সেখানেই চলে যান। এরপর তারা আর ফেরেননি। অভিযোগ নেওয়ার বিষয়ে আমরা সবসময় প্রস্তুত।”

এই ঘটনায় মতিউরের পরিবারের পাশাপাশি স্থানীয়রাও ক্ষুব্ধ। দাবি উঠেছে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *