গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের কোথাও সরতে হবে না: ট্রাম্প

গাজা ইস্যুতে অনেকখানি ঘুরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গাজা থেকে কোনো ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করা হবে না। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

মাইকেল মার্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠকের আগে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে অংশ নেন তারা। ব্রিফিংয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার এক সাংবাদিক তাকে গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের

ব্যাপারে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে ট্রাম্প বলেন, গাজা থেকে কোনো ফিলিস্তিনিকে কেউ বিতাড়িত করছে না এবং এমন পরিকল্পনা নেই। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহ পরই ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে যুক্তরাষ্ট্র গাজার মালিকানা পেতে চায়। তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাকে একটি আধুনিক শহর এবং বাণিজ্যিক ও বিনোদন

কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে গাজায় যেসব ফিলিস্তিনি বসবাস করছেন, তাদেরকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর করা হবে বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ

গাজা ভূখণ্ডে বিদ্যুৎ ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। টানা বেশ কয়েকদিন ধরে এই অবরোধ জারি রেখেছে তারা। আর ইসরাইলের এই পদক্ষেপকে যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বিদ্যুৎ ও খাদ্য সরবরাহ অব্যাহতভাবে বন্ধ করে দেওয়াকে যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যায়িত করে নিন্দা জানিয়েছে। গাজার ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীটি এক বিবৃতিতে বলেছে,

১৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরাইলের চলমান বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং দেইর আল বালাহ ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহের সীমিত লাইন সম্প্রতি বিচ্ছিন্ন করাটা যুদ্ধাপরাধ যা তৃষ্ণার্ত মানুষের

বিপর্যয়ের মুখে পতিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। হামাস বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ইসরাইল পানি ও খাদ্যকে ব্যবহার করছে এবং এটি আসলে গাজার মানবিক বিপর্যয়কে আরও খারাপ করার

একটি পদ্ধতিগত প্রচেষ্টার অংশ। একইসঙ্গে গাজার ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার ওপর অভূতপূর্ব সমন্বিত শাস্তি আরোপের জন্যও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে অভিযুক্ত করেছে হামাস।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, আমি গাজা উপত্যকা ক্রয় এবং তার মালিকানার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উপত্যকাটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বর্তমানে সেটি বসবাসের অযোগ্য।

বর্তমানে সেখানে যারা আছেন, তারা ব্যাপকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কিন্তু আমরা এই ভূখণ্ডটিকে খুব সুন্দর এবং উন্নতভাবে গড়ে তুলতে পারি। অন্যান্য দেশ যদি এ কার্যক্রমে অংশ নিতে চায়, আমরা তাদেরও স্বাগত জানাব।

এটা খুবই সুন্দর একটি শহর হবে এবং সারা পৃথিবী থেকে লোকজন এখানে বসবাস করতে আসবে। গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের অন্য জায়গায় স্থানান্তরের ইঙ্গিতও দিয়ে তিনি বলেছিলেন,

গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রতিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তারা যেন নিরাপত্তাপূর্ণ পরিবেশে শান্তির সঙ্গে সবার সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করতে পারে, সেই নিশ্চয়তা তাদেরকে আমাদের দিতে হবে।

তাদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা হত্যার শিকার হবে না। এই মুহূর্তে তারা যেখানে বসবাস করছে, সেটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং অনিরাপদ জায়গা।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিল ইসরাইলের কট্টরপন্থি রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলো। কিন্তু সম্প্রতি তারা অবস্থান পরিবর্তন করায় ট্রাম্পও আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *