
মামলা না নেওয়ায় উত্তেজিত হয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ওসিকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি ও জামালপুর জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আনিছুজ্জামান গামা।
গত বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে মোবাইল ফোনে ওসিকে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ওসিও পিপিকে চাকরি ছাড়ার কথা বলেন।ওসি ও বিএনপির নেতার এক মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ এপ্রিল সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের সঙ্গে মিছিলের পুরোনো একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলাম বাদশাহ। ওই মিছিলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আশিকুর রহমান তুলনের ছবি রয়েছে। ফেসবুকে শেয়ার করা ওই ছবি নিয়ে বাদশাহ ও তুলনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
পোস্ট দেওয়ার দিন রাতেই তুলন বকশীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হয়ে বিএনপি অফিসে যাচ্ছিল। ওই সময় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল তার উপর হামলা চালায়। তাকে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
মারধরের ঘটনায় গত ২৭ এপ্রিল রাতে থানায় একটি অভিযোগ দেন তুলন। অভিযোগে বিএনপি নেতা বাদশাসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ১০ থেকে ১২ জনকে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা বিএনপির অফিসে যাওয়ার সময় তুলনকে দেখে বাদশা, যুবলীগ নেতা আলমগীরসহ ১০ থেকে ১৫ জন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মানিক সওদাগর এবং সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম প্রিন্সকে উদ্দেশে করে আপত্তির মন্তব্য করতে থাকেন। তুলন তাদেরকে নিষেধ করলে তারা তার উপর চড়াও হয়।
অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত ২৮ এপ্রিল রাতে ওসি খন্দকার শাকের আহমেদকে ফোন করেন পৌর বিএনপির সভাপতি আনিছুজ্জামান। ফোনেই দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাগবিতণ্ডা হয়।
এক মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ওই রেকর্ডে শোনা যায়, কেন্দ্রীয় বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও স্থানীয় সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতকে উদ্দেশ্যে করে ওসি খন্দকার শাকের আহমেদকে বিএনপি নেতা আনিছুজ্জামান গামা বলেন, ‘মিল্লাত সাহেব বললেও তো আমি মানবো না। মিল্লাত সাহেব না করার কি। উনি কি মার খাইছে।’ জবাবে ওসি বলেন, ‘ আপনার, আপনার এটা দলীয় বিষয়। দুজনেই দলের লোক। আপনার দলীয় বিষয়, আপনি মামলা নেওয়ার জন্য চাপ দিতেছেন।’
প্রতিক্রিয়ায় আনিছুজ্জামান বলেন, ‘এটা দলীয় কোনো বিষয় না। আর মিল্লাত সাহেব এখানে কোনো বিষয় না। দলের একটা ছেলে মাইর খাইছে, মামলা দিছি, মামলা নিবেন।’ জবাবে ওসি বলেন, ‘মামলা দিছেন, মামলা নিব। তবে আমি ওনার কথা না শুইনা মামলা নিব।’
এরপর আনিছুজ্জামান বলেন, ‘ তাইলোতে ভাই আমরা স্বৈরাছারের দোসর। একজন না করবো আর আপনি মামলা নিবেন না। খালেদা জিয়া না করবো আর আপনি মামলা নিবেন না।’ প্রতিক্রিয়ায় ওসি বলেন, ‘মামলা নেওয়ার মতো ঘটনা না এটা। ৩২৩ এর ঘটনা,আপনি তো আইন ভালোই জানেন। আপনি পিপি একজন।’ বিএনপি নেতা বলেন, ‘২৩ এর ঘটনা ২৩ই মামলা নিবেন।’ জবাবে ওসি বলেন, ‘২৩-এ আবার মামলা কেমনে নেয়। আপনি কোর্টে মামলা করায়ে দেন। আপনার ক্ষমতা এতো, আপনি কোর্ট থেকে মামলা করায়ে দেন অসুবিধা কি।’ জবাবে আনিছুজ্জামান বলেন, ‘আপনার এত ক্ষমতা কোর্ট থেকে করায়ে দেন, তাহলে আপনি বেতন নেন কেন। আপনি রিজাইন দেন।’
জবাবে ওসি বলেন, ‘আপনিও রিজাইন দেন। আমি রিজাইন দিবো, আপনিও রিজাইন দেন। আপনি সরকারি কাজ করতাছেন, মিয়া আপনি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চলতেছেন। এই মিয়া আপনি আমারে হুমকি দিয়েন না, আমি আপনারে ডরাই না, আমি আপনারে ডরাই না। আপনি আওয়ামী লীগের লোকগুলারে বিএনপি বানায়ে জামিন করানোর ব্যাবস্থা করতেছেন।’ এ সময় আনিছুজ্জামান বলেন, ‘আমি বিএনপির নাম ভাঙাই না। আমি ইউনূস সরকারের পিপি। আমি বিএনপির পিপি না। বিএনপির গোলাম না।’
ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ড প্রসঙ্গে আনিছুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে আপত্তির মন্তব্য ও গালাগালি করার প্রতিবাদ করায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে মারধর করা হয়। দলের ছেলে মাইর খাইছে তাই মামলা নিতে বলছি। তিনি আদালতে মামলা করতে বলেন। মামলা নিতে তাকে কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। তিনি রেকর্ড করে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতে আমি বিচলিত নই, অন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপোষ নয়।’
ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, ‘মামলা না নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি সিনিয়র একজন আইনজীবী ও বিএনপি নেতা হয়ে পুলিশের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে চাকরি ছাড়তে বলেন। তার আচরণ সরকারি কাজে বাধা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন হওয়ার শামিল। বিষয়টি লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’