যু’দ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ব্ল্যাকআউট মহড়া সম্পন্ন!

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে তলানিতে এসে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। ঘটনার পর থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদেশ। তার ওপর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা।

এরই মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) টানা ১১ রাত গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। সীমান্তে যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় নিজের তিন বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সহকারে সীমান্ত ঘেঁষে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তানি সেনারাও।

এরই মধ্যে যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভারতীয় সেনাদের একটি ব্ল্যাকআউট মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেনানিবাস এলাকায়। রোববার (৪ মে) রাত ৯টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আধা ঘন্টার জন্য ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত করে ফেলা হয় পুরো এলাকাকে। খবর ইন্ডিয়া টুডের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ব্ল্যাকআউট মহড়া সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসক এবং স্টেশন সদর দপ্তরের কাছে সহযোগিতা ও সমর্থন চান ফিরোজপুর সেনানিবাসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। মহড়ার নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয় পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডকে।

মহড়ার আগে পুরো শহর ঘুরে ঘুরে ঘোষণা করা হয় পরিকল্পিত এই ব্ল্যাকআউটের কথা। এ উদ্দেশে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, যুদ্ধের হুমকির সময় ব্ল্যাকআউট পদ্ধতি বাস্তবায়নে প্রস্তুতি এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করাই এ মহড়ার লক্ষ্য। সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউটের সময়টাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে।

মহড়া শুরুর আগমুহূর্তে পুরো এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে, এরপর নিভিয়ে দেওয়া হয় সমস্ত আলো। নাগরিকদের আগে থেকেই এই ব্ল্যাকআউট মহড়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হলেও মহড়ার পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ফিরোজপুরে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধগুলোর সাক্ষী হয়েছিলেন যারা, তাদের অনেকের মধ্যেই বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। যুদ্ধের গন্ধ পেতে শুরু করেছেন অনেকেই। যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির রূপরেখা দেখতে পাচ্ছেন তারা এ মহড়ায়। কাজের খাতিরে অন্য প্রদেশ থেকে এসে বাস করা বাসিন্দাদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক, না জানি ধরপাকড়ের শিকার হতে হয় সন্দেহভাজন হিসেবে।

উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা সন্দীপ কুমার, বেশ কয়েক বছর ধরে কর্মসূত্রে বাস করছেন ফিরোজপুরে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্ল্যাকআউট মহড়ার নির্দেশনা ভাইরাল হওয়ার পর আমার আত্মীয়স্বজনরা আমাকে ফোন করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও, সীমান্তবর্তী জেলায় বহিরাগতদের প্রতি যে ধারণা পোষণ করা হয়, তা বেশ উদ্বেগজনক।

অনুজ মিত্তাল নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, যখনই কাশ্মীর উপত্যকায় বা অন্য কোথাও পহেলগাম হামলার মতো ঘটনা ঘটে, সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদেরই এর ফল ভোগ করতে হয়। ব্যবসা অদৃশ্য হয়ে যায়, বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে থাকে, খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হয়।

স্থানীয় এ ব্যবসায়ী বলেন, যুদ্ধ হবে কিনা তা জানি না। তবে, এখানকার দোকানদারদের ব্যবসা ইতোমধ্যেই ধসে পড়েছে। আতঙ্কের কারণে, মানুষ ঘরে ঘরে রেশন মজুদ করতে শুরু করেছে, তাও ঋণের জন্য। তাছাড়া, গত বেশ কয়েকদিন ধরে সেনাবাহিনীর কর্মীরা বাজারে আসছেন না, ফলে স্থানীয় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।

এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। এরইমধ্যে কাশ্মীরের সীমান্ত রেখায় (এলওসি) টানা ১১ রাত গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে মহড়া তো চলছেই, ইসলামাবাদকে সতর্কবার্তা দিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গত শনিবার পাকিস্তানও ‘আবদালি’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। ৪৫০ কিমি রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘সিন্ধু মহড়ার’ অংশ হিসেবে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *