থানা থেকে ‘হারিয়ে গেছেন’ সেই পুলিশ ইন্সপেক্টর

তিনি ডিউটিতে শেষ এসেছিলেন ৬ দিন আগে। এরপর মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে সেই যে থানা ছাড়েন, তারপর থেকে থানার ওসি-জোনের পুলিশ সুপার কেউ জানেন না তার খোঁজ। এমনকি মুঠোফোনেও মিলছে না তার হদিস। সবশেষ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ছুটি না নিয়েই কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন সেই পুলিশ ইন্সপেক্টর।

এমন কাণ্ডে আলোচনায় আসা পুলিশ কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান। তিনি আছেন পালং মডেল থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) দায়িত্বে। আশুলিয়া থানা এলাকায় জুলাই আন্দোলন চলাকালে ৬ জনের মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি তিনি। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার এড়াতেই মাসুদুর রহমান পালং মডেল থানায় অনুপস্থিত রয়েছেন বলে ধারণা সহকর্মীদের।

থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৮ এপ্রিল) মামলাটি আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকার দুই নম্বরে ছিল। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য দিন ছিল সোমবার। তবে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন ভেবে মাসুদুর রহমান পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কর্মস্থলের কাউকে না জানিয়ে ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর থানা থেকে পালিয়েছেন। এরপর তার খোঁজ না পেয়ে বিষয়টি পুলিশের অভ্যন্তরীণ মহলে আলোচনায় আসে। জানানো হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও যোগাযোগের চেষ্টা করে তার অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেননি।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) মো. তানভির হোসেন বলেন, মাসুদুর রহমান কোথায় আছেন তা আমরা জানি না। জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি কোনো মামলার আসামি কিনা তাও বলতে পারছি না। পুলিশ হেডকোয়াটার থেকে বা কোনো আদালত থেকে এই সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র আমাদের কাছে আসেনি।

এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে ও পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬ জন নিহত হন। তারা হলেন সাজ্জাদ হোসেন সজল, আবদুল মান্নান, মিজানুর রহমান, তানজিল মাহমুদ সুজয়, আস-সাবুর এবং বায়েজিদ। আশুলিয়া থানার সামনেই পুলিশ ভ্যানে নিহতদের মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম বাদী হয়ে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় ২৭ নম্বর আসামি করা হয় মাসুদুর রহমানকে। তিনি তখন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এরপর মাসুদুর রহমানকে শরীয়তপুর জেলা পুলিশে বদলি করা হয়। তিনি গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা পুলিশে যোগদান করেন। তারপর শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার তাকে ১২ ডিসেম্বর সদরের পালং মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে পদায়ন করেন। সবশেষ গত ২৪ এপ্রিল থেকে মাসুদুর রহমান পালং মডেল থানায় আসছেন না। তিনি ছুটি নিয়েও কর্মস্থল ত্যাগ করেননি। মঙ্গলবার পালং মডেল থানায় গিয়ে তার রুমটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।

তাছাড়া ব্যবহৃত সরকারি ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করলে সেটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ২৪ এপ্রিল হতে পরিদর্শক মাসুদুর রহমান থানায় অনুপস্থিত। সন্ধ্যার পর আমি থানায় এসে তাকে পাইনি। সে অন্য সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন, তার মা অসুস্থ, জরুরি ঢাকায় যেতে হবে। এমন বলে তিনি থানা চলে গেছেন। তিনি কোথায় আছেন তা আমরা জানি না। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *