পদ্মার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ, খরচে অর্ধেক: শিগগিরই কাজ শুরু হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতুর!

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এবার বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলাকে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করতে নির্মিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। প্রায় ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু পদ্মা সেতুর চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ বড়, অথচ খরচ হবে অর্ধেক।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অতি শীঘ্রই এই প্রকল্প নিয়ে বড় কোনো ঘোষণা দিতে পারেন। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্য নকশা ও বাজেট চূড়ান্ত হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই শুরু হতে পারে নির্মাণকাজ।

বর্তমানে ভোলা থেকে বরিশালে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হচ্ছে নৌপথ। ভেদুরিয়া-লাহারহাট ফেরি সার্ভিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেই পার হতে হয় যাত্রী ও যানবাহন। বিশেষ করে পণ্যবাহী ট্রাক ও বাসের জন্য সময়ক্ষেপণ হয়ে ওঠে চরম ভোগান্তির কারণ।

সেতুটি নির্মিত হলে ভোলা থেকে বরিশালে সড়কপথে পৌঁছানো যাবে মাত্র ৩০-৪০ মিনিটে। এতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই দ্বীপজেলার সঙ্গে দেশের মূলভূখণ্ডের সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি হবে দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু, ভারতের অটল সেতুর (২১.৮ কিমি) পরেই এর অবস্থান হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রউফ জানান, প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই চারলেনবিশিষ্ট সেতু নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা, যা পদ্মা সেতুর তুলনায় অনেক কম। যদিও প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় কিছুটা বাড়তেও পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সেতু নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপানের বিখ্যাত নির্মাণ কোম্পানি ‘মিয়াগাঁও’। এছাড়াও সম্ভাব্য নির্মাতা হিসেবে আলোচনায় রয়েছে কোরিয়া ও চীনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে বিদেশি অর্থায়ন নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে—এমনটিই জানানো হয়েছে সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে। প্রকল্পের সম্ভাব্য সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত।

প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেতুর সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনে সম্প্রতি ভোলা সফর করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মঈনুদ্দিন ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবদুর রউফ। তারা জানান, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

আগামী ২৫ বা ২৬ মে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, সফরটি সফল হলে জাপান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে ভোলা-বরিশাল সেতু নিয়ে।

দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প, যোগাযোগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে এই সেতু। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এটি শুধু একটি অবকাঠামো নয়, বরং এটি একটি জাতীয় পুনর্জাগরণের প্রতীক হয়ে উঠতে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *