
সচিবালয়ের নথি সন্দেহে দুই ট্রাক পুরাতন নথি আটকে দিয়েছে বরিশালের স্থানীয়রা, তবে এখনো এর কোন সঠিক প্রমান পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের মতে তাঁরা দাবি করছেন যে এগুলো সচিবালয়য়ের নথী হতে পারে। এর আগে গতকাল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে ঘটেছে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।
বুধবার গভীর রাতে সাত নম্বর ভবনের ছয় থেকে নয়তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোরে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১০ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সর্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নির্বাপণ করে। এ সময়ে ভস্মীভূত হয়েছে এলজিআরডিসহ ৫টি মন্ত্রণালয়
ও বিভাগের আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথি। আগুন নেভানোর কাজে গিয়ে ট্রাকচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ৬টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তবে নজিরবিহীন এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন-এটি নাশকতা না দুর্ঘটনা। আর সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন-তদন্তের আগে কোনো কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার রাত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনার খবর পেয়ে ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে যায় ৮টি ইউনিট। সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ৬ষ্ঠ তলা থেকে ৯ম তলা পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একে একে ঢাকার ১২টি ফায়ার স্টেশন থেকে আরও ১১টি ইউনিটসহ মোট ১৯টি ইউনিট
এবং ২১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয়ের অগ্নিনির্বাপণে অংশগ্রহণ করেন। তাদের প্রচেষ্টায় সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ১১টা ৪৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণরূপে নির্বাপণ করা হয়। এছাড়া র্যাব, পুলিশ, বিজিবি এবং সশস্ত্র বাহিনীর
সদস্যরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় পুরো সচিবালয় এলাকা কালো ও ঘন ধোঁয়ায় ডেকে যায়। আগুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ব্যাহত হয়েছে সচিবালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম। ছড়িয়ে পড়া আগুনের চারটি ফ্লোরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ,
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের প্রায় সবকিছুই ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো ঢুকতে না পারায় আগুন নেভানোর কাজে বেগ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল।
ঘটনাস্থলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক কারণ এখনো আমরা বের করতে পারিনি। আগুন নেভানোর পর আমরা যখন সব জায়গা তল্লাশি করব, তখন হয়তো আপনাদের একটা ধারণা দিতে পারব। জাহেদ কামাল আরও বলেন, ‘সচিবালয়ের আগুন
লাগার কারণ সম্ভবত ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন ছিল। এক জায়গায় আগুন ধরলে বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে সব জায়গা ছড়িয়ে পড়ে। এটা হতে পারে। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি-তিনটি জায়গায় একসঙ্গে আগুন দেখা গেছে। যখন স্পার্কিং হয়, যদি বিদ্যুৎ
লাইনের শর্টসার্কিট হয়-এটা হতে পারে। তবে এটা এখনই নিশ্চিতভাবে বলব না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তদন্ত শেষ করছি।’ এদিকে এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় গভীর রাতে
আগুন লাগার কারণ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সন্দেহের কথা বলছেন। আগের সরকারের দুর্নীতির প্রমাণসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত নষ্ট করতে আগুন লাগানো হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ। এই আগুনকে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র
হিসাবে দেখছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বিগত সময়ে হওয়া অর্থ লোপাট, দুর্নীতি নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছিলেন। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। তবে এদিন সকালে
সচিবালয়ের সামনে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সচিবালয়ের আগুনের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করেছে কি না তা তদন্তের আগে বলা যাবে না।
নিহত ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের জানাজায় অংশ নেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ওই জায়গা দিয়ে ট্রাক যাওয়াটা আমাদের ব্যর্থতাই। ট্রাক ওই জায়গা দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল না। তবে আমরা ট্রাকচালককে ধরে
ফেলেছি। তাকে আমরা আইনের আওতায় অবশ্যই নিয়ে আসব। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ব্যর্থতা কি না-প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, আমার একজন মারা গিয়েছে, এটি আমার ব্যর্থতা। অনেকেই এসব ভুলে যাবে,
কিন্তু মা-বাবা ভুলবে না। তার মা-বাবা যেন ভালো থাকতে পারেন, সে বিষয়ে যা দেখা দরকার আমরা দেখব। আগুন নেভাতে এত সময় কেন লাগল-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগুন নেভাতে কত সময় লাগবে সেটা তো আমরা এভাবে বলতে পারব না।
সেটা আগুনের ওপর নির্ভর করে। ফায়ার ফাইটারের গাড়ি যাওয়ার ওপরও অনেকটা নির্ভর করে। পানি সরবরাহের ওপরও নির্ভর করে। এছাড়া বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার ওপরও নির্ভর করে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
১৯টা ফায়ার ইউনিট একসঙ্গে কাজ করে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। সচিবালয়ে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিগত প্রায় দশ বছর যাবৎ সচিবালয়ের নিরাপত্তায় পুলিশের এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্বপালন করেছেন। তাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরাও
দায়িত্বপালন করেন। সাহায্যকারী ফোর্স হিসাবে তাদের সঙ্গে আছেন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সচিবালয়ে সেনা সদস্যরা দায়িত্বপালন করেন। অর্থাৎ সচিবালয় পুরোটাই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। এছাড়া পুরো সচিবালয় ক্লোজ
সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) আওতায় রয়েছে। সচিবালয়ের প্রতিটি ভবনের প্রতিটি ফ্লোর সিসিটিভির আওতায়। প্রতিটি ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে কলাপসিবল গেট রয়েছে। অফিস ছুটির পর ‘ফরশ’রা (চাবি রক্ষক) ওই সব গেটে তালা লাগিয়ে দেন। অর্থাৎ
কোনোভাবে এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এত নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা অবশ্যই অনুসন্ধানের বিষয় রয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা জানান, এখন সচিবালয়ে রাতের ১০টা পর্যন্ত অফিস চলে। অতীতে এটা ছিল না। এখন সন্ধ্যার পর দায়িত্বশীল কর্মকর্তরা কাজ করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাজনৈতিক পরিচয়ে যে সব ব্যক্তিকে নিরাপত্তা পাশ দেওয়া হয়েছে তাদের পাশ বাতিল করা হয়নি। ওই সব দুষ্টচক্র এখনো রাতের আঁধারে সচিবালয়ে অবাধে প্রবেশ করছে। কেন তাদের নিরাপত্তা পাস বাতিল করা হলো না তাও আমলে নিতে হবে। তারা আরও বলেন যাদের নামে নিরাপত্তা পাশ ইস্যু করা হয়েছে তাদের তালিকা সরকারকে প্রকাশ করতে হবে।
সচিবালয়ে আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়ে কর্মকর্তারা জানান, সচিবালয়ে ঢোকার মোট ফটক পাঁচটি। তবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার ফটক আছে মাত্র দুটি। এই দুই ফটক দিয়েও ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে ও বের হতে সমস্যা
হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময় সচিবালয়ে ঢোকার ফটক সম্প্রসারণ করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু কেউ কথা শোনেনি। কর্মকর্তারা বলেন, আগুন ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হলো, মন্ত্রণালয়গুলো কাঠ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে। এটি যখন করা হয়, তখন নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কাঠ দিয়েই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি রুম ছিল বন্ধ। তালা ভেঙে, জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে।
সচিবালয়ে নৌবাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল আগুন নেভাতে কাজ করে। তিনি বলেছেন, আমাদের নৌবাহিনীর টিম এখানে কাজ করছেন। শর্টসার্কিট থেকে নয়। মনে হলো, পরিকল্পিতভাবে লাগছে,
বিভিন্ন জায়গা থেকে হয়েছে। শর্টসার্কিট হলে একটা জায়গা থেকে হয়। এক জায়গা থেকে নয়, এটা হয়েছে কয়েকটা জায়গা থেকে। যদিও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো বার্তায় এই বিবৃতি আমিনুল ইসলামের ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, এই আগুন স্যাবোটাজ হওয়ার আশঙ্কা আছে, এটা ধরে নিয়েই আমাদের তদন্ত করতে হবে। সচিবালয় একটি কেপিআইভুক্ত
এলাকা। আমাদের এখন চ্যালেঞ্জিং সময় যাচ্ছে। এটা ধরে নিতে হবে যে, এই আগুনের মোটিভ কী হতে পারে? এই আগুনের টার্গেট হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া। যদি প্রথমেই ‘স্যাবোটাজ’ না ধরে তদন্ত করা হয় তাহলে ভুল হবে। যে
ভবনে আগুন লেগেছে সেখানে কারা নিয়োজিত ছিল? ফায়ার সার্ভিসের কারা ছিল? ফায়ারের ইকুইপমেন্ট কাজ করেছে কি না? এসব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করতে হবে। তিনি বলেন, আগে দেখতে হবে সেখানে মানুষ ছিল কি না। সেখানে মশার কয়েল, রান্না হিটার বা সিগারেট ছিল কি না। মানুষ না থাকলে এসব থাকার কথা নয়। মানুষ না থাকলে তো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার কথা। সেটা বন্ধ করা না থাকলে ইনটেনশনটা বুঝতে হবে।
আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ আরও বলেন, আগুন যদি ছয় তলাতে হয় সেটা কিন্তু রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমেও কোনো কিছু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে করা হতে পারে। ড্রোন ব্যবহার কিংবা মানুষ ঢুকেছিল কি না সেটার আলামত খুঁজতে হবে। এটা স্যাবোটাজ না
এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে সেখানে তো পূর্ণাঙ্গ ফায়ার স্টেশনই থাকার কথা। সেখানে টার্ন টেবল লেডার ব্যবহার করার কথা। সেখানে আদৌ সেটা ছিল কি না? পাম্প ছিল কি না? এখানে লেডার কেন ঢুকতে
পারল না? আমরা শুনছি, খবর পাচ্ছি, গণপূর্ত সেখানে গেটের ওপরে ছাউনি দিয়েছে। সেটা সরানোর জন্য ফায়ার চিঠিও দিয়েছে। ফায়ারের চিঠিকে কেন আমলে নেয়নি গণপূর্ত সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। আর পানির লেয়ার পর্যাপ্ত ছিল না।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়া অস্বাভাবিক নয়। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির জোর দাবি করছি।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের এক বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনো নাশকতা কি না তা তদন্ত করা দরকার।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের যারা চাটার দল ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিল আমলাদের বৃহৎ একটা অংশ। এদের ওপর ভর দিয়েই হাসিনা এই দেশে তার
ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। যখনই বিপ্লবীরা হাসিনার অপকর্ম, চুরি, লুটপাট, দুর্নীতির দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে তখনই সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইলগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে
দিল। রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সবার আগে আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনে যেসব চাটার দল এখনো ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে তাদের শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। সাবধান করার সময় আর নাই। নাহিদ ইসলাম ভাই, বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন। পুরো বাংলাদেশ আপনাদের সাথে আছে।’
এদিকে সচিবালয়ে গভীর রাতে লাগা আগুন ১০ ঘণ্টা পর নেভানো গেলেও কয়েকটি ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ সচল না হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে প্রশাসনের এ প্রাণকেন্দ্রের দাপ্তরিক কাজ। আগের দিন
ছিল বড়দিনের ছুটি। আর বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। অফিসসূচি অনুযায়ী সকালেই সচিবালয়ে হাজির হন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা। কিন্তু কেবল একটি গেট খোলা থাকায় প্রচণ্ড ভিড় লেগে যায়। সেই ভিড় পেরিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভেতরে ঢুকলেও দাপ্তরিক কার্যক্রম না হওয়ায় অনেকেই আবার বেরিয়ে পড়েন। তবে যেসব ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে, সেখানে কার্যক্রম চলার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
আগুনের ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয় অভ্যন্তরে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের আশ্রিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্রুত
সচিবালয় থেকে বহিষ্কার ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান। ইতোপূর্বে পরিষদের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ে আবেদন জানানো হলেও তার ওপর কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করে আগের পুলিশ অফিসার ও স্টাফদের বহাল রাখাসহ অন্যান্য বিষয়ে উদাসীন মনোভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়।
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে ছয় কমিটি : সচিবালয়ের সাত নং ভবনে আগুনের ঘটনা তদন্তে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দুইটি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে
একটি, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উল্লিখিত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পৃথক আদেশে কমিটিগুলোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ৪৩৫ স্মারকে গঠন করা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণিকে। কমিটিতে পুলিশের আইজি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বুয়েটের পুরাকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর মঞ্জুর
, ঢাকা সেনানিবাসের কমান্ডেট সিএমটিডি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রাসেল, বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত খান এবং বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাতকে সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালককে (ডিজি) কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে জারি করা আদেশে বলা হয়, সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন, অগ্নিদুর্ঘটনার পেছনে কারো ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কি না তা উদ্ঘাটন, এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে ও সচিবালয়ের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিটি।
একই বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডগুলোর ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এবং তালিকা করতে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব প্রশাসন মোর্শেদা আক্তারকে। কমিটিতে উপ-সচিব মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার ও সহকারী সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়কা দেবে সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মাসুম।
কমিটি চাইলে যে কোনো সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। ভবিষ্যতের যে কোনো দুর্ঘটনার ফলে উদ্ভূত ক্ষতি প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রণয়ন করবে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) মো. আবদুছ সামাদ আল-আজাদকে। কমিটিতে উপ-সচিব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, সিস্টেম এনালিস্ট সুকান্ত বসাক ও সহকারী মেইন্টেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার এএসএম মেহরাব হোসেনকে সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে উপ-সচিব মো. কামাল হোসেন। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মুহাম্মদ হিরুজ্জামানকে। যুগ্মসচিব মো. ইকবাল হোসেন, উপ-সচিব মো. জিল্লুর রহমান ও প্রোগ্রামার মো. রাশেদ ভূঁইয়াকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে উপ-সচিব মো. ফজলে এলাহী।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭নং ভবনের ৬ষ্ঠ ও ৭ম তলায় হঠাৎ আগুন লাগার কারণ এবং শাখা ও অধি-শাখা পর্যায়ে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করতে বলা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন)। এছাড়া অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ), অতিরিক্ত সচিব নগর উন্নয়ন, যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা-২), যুগ্মসচিব (উন্নয়ন অধিশাখা) ও উপ-সচিব প্রশাসন-১ কে কমিটিতে সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে যুগ্মসচিব (প্রশাসন)।
এদিকে আগুনের ক্ষতি নিরুপণ ও কারণ উদ্ঘাটনে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। অবিলম্বে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে- ওই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) মোহাম্মদ শফিউল আরিফকে। এছাড়া যুগ্মসচিব জাহিদুল ইসলাম (আইন ও প্রতিষ্ঠান), যুগ্মসচিব আ,স,ম হাসান আল আমিন, যুগ্মসচিব সুব্রত কুমার শিকদার, উপ-সচিব ড. অশোক কুমার বিশ্বাস ও প্রকৌশলী মো. মোনায়েম উদ্দিন চৌধুরীকে সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে একই বিভাগের উপ-সচিব রহিমা আক্তার।