মৃত্যুর আগে শ্বশুরকে যে কথা বলেছিলেন পলাশ, করলেন যে ভয়াবহ অভিযোগ

সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যুর পর থেকেই স্ত্রী সুস্মিতা সাহাকে নিয়ে চলছে আলোচনা আর সমালোচনা। স্ত্রীর কারণেই আত্মহত্যা করছে স্বামী এইটা ঘুরে ফিরে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে নিহত পলাশের স্ত্রী সুস্মিতার পরিবারে সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া গেলো ভিন্ন বার্তা।

নিহত পলাশের স্ত্রী সুস্মিতার বাবা ভরত সাহা (৬১) বললেন ভিন্ন কথা, তিনি বলেন, আমি, আমার বউ কেউই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যেতে পারিনি সুস্মিতার শাশুড়ির কারণে। শাশুড়ি যে এতো দজ্জাল তা আমাদের জানা ছিল না। যেদিন মারা যায় সেদিন সকালেও ফোন দিয়েছিল জামাই পলাশ। বলেছিল সুস্মিতাকে নিয়ে যান ওই কিছুদিন আপনাদের ওখানে থেকে আসুক।

এভাবেই কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে যাচ্ছিলেন পালাশের শ্বশুর ও স্ত্রী সুস্মিতার বাবা ভরত সাহা (৬১)। ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা তিনি। তার একমাত্র মেয়ে সুস্মিতা সাহা। বয়স ২০ বছর। বছর ২ আগে বিয়ে হয় পলাশের সঙ্গে।

সুস্মিতার বাবা ভরত সাহা আরও বলেন, এই মেয়েকে নেয়ার জন্য হুমরী খেয়ে পড়েছিল। আমি বিয়ে দিবো না, আমার কোন অর্থ কড়ি নেই। অনেক সমস্যার মধ্যেও আমি মেয়েকে বিয়ে দেই, এই ছেলে (পলাশ) আমার মেয়েকে ছাড়া বিয়ে করবে না। আমি রত্ন পেয়েছিলম, এই জামাই (পলাশ) আমার রত্ন ছিলো। তার পরেও আমি মেয়ে বিয়ে দিতাম না, আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি। সাহার (সম্প্রদায়) মধ্যে ছেলে পাবো না তাই চিন্তা করলাম একদিন না একদিন মেয়ে বিয়ে দিতে হবে, এ কারণেই আমি বিয়ে দিলাম। বিয়ের পর থেকে একটি দিনের জন্যও আমি, আমার বউ, আমার একমাত্র ছেলে ওদের (পালাশের বাড়ি) বাড়িতে যেতে পারিনি এই মহিলার (সুস্মিতার শাশুড়ি) জন্য। শশুড়ি যে এতো দজ্জাল আমাদের জানা ছিলো না, কেউ আমাকে বলে নাই। বিয়ের পর বাড়িতে যেতে দেরি হওয়ায় আর্শিবাদ করবে না, বলে বউ পেয়ে পাগল হয়ে গেছিস।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা থাকাকালীনও আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে একটি দিনের জন্যও যেতে পারিনি। আমার জামাই (পালাশ) ফোনে করে বলে, আমার মা একটু অন্য রকম, এখন পর্যন্ত আপনাদের আনতে পারিনি, আপনি মনে কিছু করবেন না, এ জন্য আমি ক্ষমা চাই।

ভরত সাহা আরও বলেন, যেদিন মারা যায় সেদিন সকালেও ফোন দিয়েছিল জামাই পলাশ। বলেছিল সুস্মিতাকে নিয়ে যান ওই কিছুদিন আপনাদের ওখানে থেকে আসুক। আমি অফিসে যাই আর অফিসে গিয়েই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আগের দিন ঝগড়াঝাটি করেছে, আমার মেয়েকে মেরেছে। মাঝে মধ্যেই আমার মেয়েকে মারে, না খাইয়ে রাখত পলাশের মা। আমার জামাই মেয়ের ঘরে যেতে চাইলে যেতে দিতো না, বলতো আগে আমার ঘরে থাকবি, আর পরে বউয়ের কাছে যাবি।

তিনি আরও বলেন, সুস্মিতার শাশুড়ির মূল হোতা, আমরা গরীব, আমরা তেমন কিছু দিতে পরিনি। বিভিন্ন সময় আমার মেয়েকে বলেছিল আমরা ১০০ ভরি স্বর্ণ দিবো, বাড়ি দিবো, গাড়ি দিবো বলে প্রতিনিয়ত অত্যাচার করতো। আমার মেয়ে অতিষ্ট হয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম মা-রে তুই যদি কিছু করিস আমি মরে যাবো। মারা যাবার আগের রাতে পলাশের মা কাকে যেন বলে পালাশকে আমার মেয়ে মারধর করেছে। তখন আমার মেয়ে পলাশকে বলে শোন কি বলে তোমার মা? তখন আমাকে বলে সুস্মিতা আমার গায়ে কোন হাত দেয়নি।

চৌধুরী পাড়ার গৃহবধূ সাধনা সাহার দেবরের মেয়ে সুস্মিতা। সাধনা বলেন, সুস্মিতার খালাতো ননদ বলেন, মারা যাবার ৩ বা ৪ দিন আগে পলাশের সঙ্গে সুস্মিতার কথা হয়। পলাশ বলেছে আমার মা-তো তোমাকে দেখতে পারে না, আমি যদি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে সব খরচ দিই তুমি তোমার বাবার বাড়িতেই থাকো। এটা নিয়ে ও (সুস্মিতা) অনেক কান্নাকাটি করেছে। বাচ্চা নেয়ার বিষয়ে পলাশ অফিসের এক কলিগের সঙ্গেও কথা বলেছিল। পলাশ বলেছিল আমি অনেক বাচ্চা পছন্দ করি, কিন্তু মায়ের জন্য বাচ্চা নিতে পারছি না। আমার মা চায় আমি যেন আমার বউকে ডিভোর্স দিয়ে দেই। সে (পলাশ) নিজেই বলেছিলো তুমি (সুস্মিতা) এখানে টিকতে পারবে না, তোমার এখানে টেকা সম্ভব না, তুমি বাড়ি চলে যাও আমি তোমার সব খরচ দিবো।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সূত্রপাত হয়, পালাশ যাওয়ার সময় সুস্মিতাকে টাটা দিয়েছিলো, তার মা (পলাশের মা) দেখার পর থেকেই কেন দিয়েছিলো। সুস্মিতার রান্না করা ডালের প্রসংশা করায় ডালের গামলা ফেলে দিয়েছিল সুস্মিতা শাশুড়ি।

প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।

ওই চিরকুটে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার মৃত্যুর জনা মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।‬‎’

পরে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাবের পাহারায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশী গ্রামে। দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মাশানে তার মরদেহের শেষকৃত্য করা হয়। এর আগে র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *