মৃ’ত্যুর আগে গাজা নিয়ে যা বলেছিলেন আল-জাজিরার সাংবাদিক

বয়স মাত্র ২৩ বছর, এই তরুণের নাম হোসাম শাবাত। তিনি আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের সাংবাদিক ছিলেন এবং সোমবার রাতে ফিলিস্তিনের উত্তর গাজা অঞ্চলের জাবালিয়া শহরে ইসরাইলি বিমান হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

হোসাম ছাড়াও, ইসরাইলি বাহিনীর হাতে মোহাম্মদ মনসুর নামে আরেক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। হোসামের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম Instagram এবং X হ্যান্ডেলে প্রায় ৮ লাখ অনুসারী ছিল। হোসামের মৃত্যুর পর, তার টিম একটি পোস্টে জানায় যে, “আমরা তার শেষ বার্তাটি শেয়ার করছি।”

তার পোস্টে তিনি লিখেছেন, “যদি আপনি এটি পড়েন, তাহলে এর মানে হল আমি নিহত হয়েছি, সম্ভবত ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি।”

হোসাম আরও লিখেছেন, “গত ১৮ মাসের যুদ্ধে প্রতিটি মুহূর্ত তিনি তার জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তিনি উত্তর গাজার ভয়াবহতা মিনিটে মিনিটে নথিভুক্ত করেছেন এবং যে সত্যকে কবর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তা বিশ্বকে দেখানোর জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন।” তিনি বলেন, “আমি ফুটপাতে, স্কুলে, তাবুতে—যেখানেই পারি ঘুমিয়েছি।

প্রতিটি দিন ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। আমি মাসের পর মাস ক্ষুধা সহ্য করেছি, তবুও কখনো আমার জনগণের পক্ষ ত্যাগ করিনি। আল্লাহর কসম, একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি, সত্য প্রকাশের জন্য সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলেছি।”

হোসাম লিখেছেন, “এখন অবশেষে আমি বিশ্রামে আছি, এমন বিশ্রাম যা আমি গত ১৮ মাসে করিনি। আমি সাংবাদিকতা করেছি কারণ আমি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি এই ভূমি আমাদের এবং এটিকে রক্ষা করতে, এর জনগণের সেবা করতে গিয়ে আমি আমার জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছি।”

তিনি তার পাঠকদের কাছে অনুরোধ করেছেন, “কাজা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করো না, বিশ্বকে চোখ ফিরিয়ে নিতে দিও না, লড়াই চালিয়ে যাও, আমাদের গল্প বলতে থাকো যতক্ষণ না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়।”

এছাড়া, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস, হোসাম ও মনসুরের হত্যার জন্য হামাসকে দায়ী করেছেন, দাবি করেছেন যে হামাস এবং তাদের কার্যক্রম এই অঞ্চলে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং অসংখ্য মৃত্যুর কারণ হয়েছে।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সোমবার গাজায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক হোসাম শাবা এবং মোহাম্মদ মনসুরের হত্যার নিন্দা জানিয়েছে এবং তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ)।

ইসরাইলের বর্বর হামলায় এ পর্যন্ত ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, এবং দুই শতাধিক সাংবাদিকও নিহত হয়েছেন। পুরো গাজা এখন দখলদারদের দ্বারা নরকে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন, হোসামের মতো তরুণ, নারী, ও শিশুরা নিহত হচ্ছে। এদিকে, হামাসের দোহাই দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতোই ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *