৪ মাসের শিশুসন্তানকে বিক্রি করে গহনা ও মোবাইল কিনলেন মা

স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় চার মাসের কোলের সন্তানকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন স্ত্রী। সেই টাকায় তিনি কিনেছেন পায়ের নূপুর, নাকফুল ও মোবাইল ফোন। তবে পরবর্তীতে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়েছেন।

টাঙ্গাইলের মধুপুরের শেওড়াতলা এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওই শিশুর বাবা বিষয়টি থানায় জানালে সারা রাত অভিযান চালিয়ে আজ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জানা যায়, বছর দুয়েক আগে উপজেলার পুন্ডুরা শেওড়াতলা এলাকার আজম আলীর ছেলে রবিউল ইসলামের সঙ্গে গোপালপুরের বলাটা গ্রামের লিটন মিয়ার মেয়ে লাবনী আক্তার লিজার বিয়ে হয়।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের বিয়ে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই রবিউলের অসচ্ছলতার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়।

রবিউল সংসারে শান্তির লক্ষ্যে বাড়ির পাশেই ঘরভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। চার মাস আগে তাদের সংসারে জন্ম নেয় একটি পুত্রসন্তান। রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ছেলে তামিমের জন্মের পর থেকে সংসারে শান্তি নেমে আসে।

কয়েক দিন আগে লাবনী ছেলেকে নিয়ে তার বোনের বাড়ি ভূঞাপুরে যায়। কয়েক দিন পর বাড়ি আসতে বললে সে দুর্ব্যবহার করে। আমার সঙ্গে ঘরসংসার করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।

আমি কয়েক দিন পর আবার ফোন করে বলি তামিমের দাদা অসুস্থ। ছেলেকে নিয়ে আসো। সে তামিমকে দেখতে চাচ্ছে।লাবনী তাতেও ফিরে আসেনি। তিনি আরো বলেন, ‘বার বার যোগাযোগের পর গতকাল বৃহস্পতিবার লাবনী সন্তান বিক্রি করে ফেলার

বিষয়টি বলে। পরে কৌশলে তাকে ভূঞাপুর থেকে পাকুটিয়ায় ডেকে এনে বাড়ি নিয়ে আসি। এ সময় সে শিশু তামিমকে বিক্রি করার কথা স্বীকার করে। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানাই।’

শিশু তামিমের মা লাবনী আক্তার লিজা বলেন, ‘আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি মনির নামের একজনের সহযোগিতায় গত ১০ এপ্রিল ভূঞাপুরের এক লোকের কাছে ৪০ হাজার টাকায় তামিমকে বিক্রি করি। ওই টাকা দিয়া মোবাইল, পায়ের নূপুর ও নাকফুল কিনছি। এইডা আমার ভুল হইছে।

মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লাবনী নামের এক মা তার ছেলেকে বিক্রি করেছেন বলে স্বামী আমাদের জানান। পরে শিশুটিকে ঘাটাইল থেকে উদ্ধার করে আজ শুক্রবার থানায় নিয়ে এসেছি। শিশুটির সঙ্গে শিশুর মা ও ক্রেতাদের ধরে আনা হয়েছে। তবে মেয়েটি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। তার পরিপক্ব বয়স হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভূঞাপুরের অটোরিকশা চালক হোসেন আলী এবং সোনাবানু নিঃসন্তান দম্পতি। এক যুগ ধরে তাদের সন্তান হয় না। তারা শিশুটিকে কিনে শ্বশুড়বাড়ি ঘাটাইলে চলে যান। এ বিষয়ে শিশুটির পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *