শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়েই হচ্ছে ‘নতুন আওয়ামী লীগ’: ভারতীয় গণমাধ্যম

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দীর্ঘদিন গড়িয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখনও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগ জেলে অথবা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

শুধু তাই নয় জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আবারও সরব হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

এমতাবস্থায় জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ভেতরে বড় রকমের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। রোববার (১৬ এপ্রিল) ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে,

ভবিষ্যতে শেখ হাসিনা দলটির নেতৃত্বে না-ও থাকতে পারেন-এমন পরিস্থিতিকে সামনে নিয়েই চলছে প্রস্তুতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্রিয় হয়েছে দলটির অনেক নেতা।

আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ থাকবে, নেতৃত্বে শেখ হাসিনা থাকবেন না। তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতারাও বাদ যাবেন। আওয়ামী লীগের পরিচিত কিছু নেতানেত্রীকে সামনে রেখে নব্য আওয়ামী লীগ বা তথাকথিত পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগকে রাজনীতির ময়দানে আনার একটি পরিকল্পনা বেশ এগিয়েছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব এই প্রয়াসকে ‘প্রতারণা’ ও তাদের ‘দলকে ধ্বংস করার চক্রান্ত’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

ভারতের কূটনীতিকদের একাংশও মনে করেন, হাসিনাকে বাদ দিয়ে নব্য আওয়ামী লীগ গঠিত হলে দিল্লির পক্ষে তা সুখকর হবে না। কারণ এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশের যেসব আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীর নাম উঠে আসছে, তাদের ভাবমূর্তি আদৌ পরিচ্ছন্ন নয়, তার উপরে পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে কয়‌েকজনের। ভারতের এক সাবেক কূটনীতিকের কথায়, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দিল্লির কিছু করণীয় নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের বন্ধু ও আস্থাভাজন রাজনৈতিক শক্তি। তার নেতৃত্বও পাকিস্তান-বান্ধবদের হাতে চলে গেলে ভারতের পক্ষে তা বিপর্যয়ের চেয়ে কম কিছু হবে না।”

আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “২০০৭ সালে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু নেতাকে নিয়ে একটা আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা করেছিল পশ্চিমা শক্তি। তা ব্যর্থ হয়। এবারেও তাই হবে।”

ওই নেতার মতে, ভারতের কংগ্রেসের যেমন গান্ধী পরিবার, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকের কাছেও শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের উপরে অগাধ আস্থা ও ভরসা। রাজনীতিতে দুই পরিবারের ত্যাগ ও সাফল্য কম নয়। রাহুল গান্ধী যেমন দাদী ও বাবাকে হারিয়েছেন, শেখ হাসিনার বাবা-মা, ভাইসহ গোটা পরিবার খুন হয়েছে। ওই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “হাসিনাহীন আওয়ামী লীগ টিকবে না। আদতে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য।”

কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, আপাতত এই ‘রিফাইন্ড’ চক্রান্তই তাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, হাসিনার বিরুদ্ধে তোপ দাগলে তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হবে। এলাকায় ফিরে নির্বাচনে অংশ নিতেও দেওয়া হবে। অন্যথায় তাদের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার।

কী ভাবে এই বিষয়টি মোকাবিলা করছে আওয়ামী লীগ? দলের ওই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, জেলায় জেলায় ভার্চুয়াল মিটিং করছেন নেতৃত্ব। সেই মিটিংয়ে হাসিনা নিজে যুক্ত হচ্ছেন। ঘণ্টা কয়েক ধরে তিনি কর্মীদের কথা শুনছেন। ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৩টি জেলার কর্মীদের সঙ্গে এই বৈঠক শেষ হয়েছে।

ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=oWWbPW1pM8o

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *