ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দা’বানল, রাস্তায় গাড়ি রেখেই পা’লাচ্ছে এলাকাবাসী

দখলদার ইসরায়েলের দখলকৃত জেরুজালেমে বিশাল দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে। এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বলে জানিয়েছেন ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগের জেরুজালেম বিভাগীয় কমান্ডার সুমিলিক ফ্রিডম্যান। দাবানলের কারণে রাস্তায় চলা গাড়ি আটকে পড়ে। এ কারণে আগুন থেকে বাঁচতে ইসরায়েলিরা গাড়ি রেখে দৌড়ে পালাচ্ছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

বুধবার সন্ধ্যায় অন্ধকার নামার পর সুমিলিক ফ্রিডম্যান সতর্ক করে বলেন, সামনে রয়েছে দীর্ঘ ও সংকটপূর্ণ সময়, কারণ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জেরুজালেম শহরের উপকণ্ঠে ছড়িয়ে পড়া আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন—যার ধীর হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

জেরুজালেম পাহাড়ি অঞ্চলে এই আগুন বুধবার সকালে শুরু হয়। ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানায়, অন্তত পাঁচটি স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ে।

শামির মেডিক্যাল সেন্টারের জরুরি চিকিৎসা বিভাগের পরিচালক ডা. গাল পাচিস ওয়াইনেটের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, ভর্তি হওয়া ব্যক্তিদের কেউই গুরুতর আহত নন এবং আহতদের বেশির ভাগই লত্রুন এলাকা থেকে এসেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে পাঠানো একজন রোগী বলেছিলেন যে তারা শেষ মুহূর্তে তাদের গাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। ওখানে বাতাস খুব গরম ছিল এবং পুরো গাড়িতে আগুন লাগার ঠিক আগেই তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

বুধবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস বিভাগ জানায়, তারা মাঠে ১৬৩টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট এবং ১২টি ফায়ার সার্ভিস বিমান দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। আগুন ছড়িয়েছে লত্রুন, নেভে শালোম, এশতাওল ফরেস্টসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এছাড়া মেভো হোরোন, বার্মা রোড হয়ে বেইত মেইর, মেসিলাত সিয়োন এবং শাআর হাগাইয়ের একটি পেট্রল পাম্পের কাছেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

একই সময়ে দেশজুড়ে আরো অনেক স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে অতিরিক্ত ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। এ পর্যন্ত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে, তবে কারো অবস্থাই গুরুতর নয়।

জিউশ ন্যাশনাল ফান্ডের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১১ হাজার ৭০০ ডুনাম (২,৯০০ একর) এলাকা পুড়ে গেছে। কানাডা পার্ক যা লত্রুনের কাছে অবস্থিত, তা প্রায় সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে জেরুজালেম ফায়ার সার্ভিস বাহিনীর কমান্ডার সুমিলিক ফ্রিডম্যান বলেন, জেরুজালেম পাহাড়ের আগুন ‘এই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাবানল হতে পারে’ এবং এখনো এটি নিয়ন্ত্রণের ধারে-কাছেও আমরা পৌঁছায়নি।

তিনি জানান, আগুন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেসিলাত সিয়োন এলাকায় শুরু হয়, যা বেইত শেমেশের কাছে অবস্থিত এবং তা প্রথমে প্রবল বাতাসে পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে পড়ে, এরপর দিক পরিবর্তন করে পূর্বমুখী হয়।

তিনি বলেন, আমাদের কার্যক্রম অনেক দীর্ঘ সময় ধরে চলবে। আমরা এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণ থেকে অনেক দূরে। তিনি সতর্ক করে বলেন, আগুন আরো খারাপ হতে পারে, কারণ বাতাসের গতি ৯০-১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা (৫৬-৬২ মাইল প্রতি ঘণ্টা) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুনের প্রকৃত কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। ফ্রিডম্যান সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই, এবং আমরা এখনো এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি না।

এদিকে দাবানল পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় গ্রিস, সাইপ্রাস, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি ও বুলগেরিয়ার সহায়তা চেয়েছে দখলদার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গ্রিস ও ইতালির অগ্নিনির্বাপক বিমান ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। দখলদার ইসরায়েলের সেনাপ্রধান তার সেনাদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *