আলোচিত সেই ২ বোন ও ভাগ্নেকে নিয়ে অবিশ্বাস্য তথ্য দিলো গোয়েন্দা পুলিশ

রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ায় দুই বোন মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগমকে নৃশংসভাবে হ/ত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। অবশেষে সেই ঘটনার রহস্য উদঘাটনের দাবি করলো গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের দাবি, হ/ত্যাকারী আর কেউ নন—নিজেদেরই ভাগ্নে, মাত্র ১৫ বছরের কিশোর গুলাম রাব্বানি খান তাজ।

ঘটনার পেছনের তারিখ ও তথ্যঘটনাটি ঘটে গত ৯ মে ২০২৫, দুপুরে মিরপুর থানার আওতাধীন শেওড়াপাড়া এলাকায়। খবর পাওয়ার পর ডিবির একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিকভাবে সিসিটিভি ফুটেজ, পরিবার সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং পারিপার্শ্বিক আলামতের উপর ভিত্তি করে তদন্ত এগিয়ে নেয়া হয়।

সন্দেহ জন্মায় আচরণেডিবির ভাষ্য মতে, তদন্ত চলাকালীন এক পরিবারের সদস্যের অস্বাভাবিক আচরণ তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই কিশোর, গুলাম রাব্বানি খান তাজ, পুলিশ সদস্যদের অনুসরণ করছিল, কে কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, কোথায় যাচ্ছে—সবকিছু সে পর্যবেক্ষণ করছিল।

সিসিটিভিতে ধরা পড়ে সবসিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ৯ মে দুপুর ১২:৪৭-এ লাল টি-শার্ট, লাল ক্যাপ ও মুখে মাস্ক পরিহিত এক কিশোর বাড়িতে প্রবেশ করে। পরে ১:৫৭-এ সে বের হয়ে আসে পোশাক পরিবর্তন করে—নতুন টি-শার্ট, আলাদা প্যান্ট, মাস্ক ছাড়া। এতেই পুলিশের সন্দেহ নিশ্চিত হয়।

কে এই গুলাম রাব্বানি?তাজ সম্পর্কে জানা যায়, সে নিহত দুই বোনের আরেক বোনের ছেলে। মাত্র নবম শ্রেণির ছাত্র, বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছর। তাকে ঝালকাঠি থেকে আটক করে ঢাকায় আনা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজের অপরাধ স্বীকার করে।

৩ হাজার টাকার সাইকেলের জন্য দুই খুন!জবানবন্দিতে তাজ জানায়, সে পুরনো একটি বাইসাইকেল কেনার জন্য ৩ হাজার টাকা চায়। স্কুল ছুটির সুযোগে সে তার খালার বাসায় আসে টাকা চাইতে। কিন্তু খালার ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে এবং তখনই সে ধারালো ছুরি দিয়ে খালাকে আঘাত করে। চিৎকার শুনে আরেক খালা আসলে তাকেও নৃশংসভাবে হ/ত্যা করে।

ঘটনার পর পালানোর পরিকল্পনাতাজ হ/ত্যার পর ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড় বদলায়, রক্তমাখা জামা-কাপড় ও জুতা লুকিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে মসজিদের ওয়াশরুম থেকে কাপড় ফেলে দেয় জানালার ভেন্টিলেটর দিয়ে। বাসায় ফিরে রক্তমাখা স্যান্ডেলও ফেলে আসে এক পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে।

প্রমাণ ও মামলাডিবি জানায়, তার জবানবন্দির ভিত্তিতে রক্তমাখা জামা, জুতা, ছুরি সহ আরও আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত মরিয়ম বেগমের মেয়ে নুসরাত জাহান মিষ্টি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কেন এই নির্মমতা? মানসিক সমস্যা নাকি পারিবারিক অবহেলা?তদন্তকারীরা জানায়, তাজ তার বাবার কাছ থেকে অবহেলার শিকার ছিল, তাকে ‘পাগল’ বলত, একবার সে বাবাকে মারার ভয়ও দেখায়। স্কুল থেকেও সে পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার কারণে বহিষ্কৃত হয়। এখন এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীর তদন্ত চলছে—তাজের মানসিক অবস্থা, পারিবারিক সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতে আরও কেউ এই ঘটনার পেছনে জড়িত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *